প্রকাশিত: Wed, Apr 5, 2023 5:01 AM
আপডেট: Thu, Jun 26, 2025 8:14 PM

বেকার হচ্ছে ৫০ হাজার কর্মচারি, ঋণের টাকা ফেরত দেওয়ার দুশ্চিন্তা

অনেকের অভিযোগ, আগুন লাগানো হয়েছে

মাসুদ আলম: রাজধানীর বঙ্গবাজারে ৬টি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৫  হাজার দোকান পুড়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। একইসঙ্গে ঈদের আগেই এসব মার্কেটে কর্মরত অর্ধ লাখ কর্মচারী বেকার হয়ে পড়ার এবং বেতন না পাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আর ঈদ উপলক্ষে অধিকাংশ ব্যবসায়ী ঋণের টাকায় মালামাল তুলে এখন চোখে অন্ধকার দেখছেন। 

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মঙ্গলবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত। ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিট ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। 

আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রধান বাধা ছিল উৎসুক জনতা। পানির স্বল্পতা ও বাতাসের কারণেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দেরি হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৮ কর্মীসহ ১৮ জন আহত হন। ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব ও ওয়াসাসহ অনেক বাহিনী ও সংস্থা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার দিয়ে পানি নিক্ষেপ করে। বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের ভেতর চারটি মার্কেট আছে। বঙ্গবাজার মার্কেট, মহানগর মার্কেট, আদর্শ মার্কেট ও গুলিস্তান মার্কেট। সবকটি পুড়ে গেছে। পরে বঙ্গবাজারের পাশে অ্যানেক্স টাওয়া সাততলা মার্কেটে আগুন  ছড়িয়ে পড়ে। এরপর দক্ষিণ পাশে  দোতলা টিনের মহানগর কমপ্লেক্সে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকে  আগুন লাগে  পুলিশ হেডকোয়ার্টারের ব্যারাকে। পুলিশ সদস্যরা নিরাপদে বেরিয়ে আসতে পারলেও বিভিন্ন মালামাল পুড়ে যায়। 

সকাল সাড়ে ৯টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে গড়িমসির অভিযোগ তুলে ফায়ার সার্ভিসের সদরদপ্তরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা। 

এসময় রাস্তায় রাখা ব্যবসায়ীদের মালামালের লুটের ঘটনাও ঘটে। 

ব্যবসায়ী মতিন বলেন, আগুনে সব শেষ করে দিলো। আমরা পথে নেমে গেলাম। ঝুঁকি হলেও অন্তত কিছু রক্ষা করতে হবে। এত কষ্ট হচ্ছে মনে হয় বুকের ভেতর আগুনের গোলা পাক খাচ্ছে। আমরা ঋণের টাকায় মালামাল তুলেছি। এখন কিভাবে ঋণের টাকা শোধ করবো। 

ব্যবসায়ী আবু রাহাত জানান, তাদের চারটি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।  বঙ্গমার্কেট রাতে বন্ধ হয় ১০টায়, খোলে সকালে ৮টা বাজে। সেসময় কাট-আউট চালু করলে পুরো মার্কেটে বিদ্যুতের লাইন চলে। তার আগে তো কারেন্টের কোনো কাজ নাই। কারেন্টের কাজ না থাকলে আগুন ধরে কেমনে? এটা পরিকল্পিত। এইটা পরিকল্পনা করে ঘটানো হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলেন, এটি পরিকল্পিত অগ্নিকাণ্ড। ঈদের আগে এই অগ্নিকাণ্ডের কারণে দোকানিরা সর্বশান্ত হয়েছেন। সেই সঙ্গে তাদের মনে আরেক শঙ্কা ভর করেছে। তা হলো পুড়ে যাওয়া দোকানের জায়গায় তারা নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে। আগে বিভিন্ন মার্কেটে আগুন লাগার পর এমন দেখা গেছে যে যারা প্রকৃত দোকানি, তারা আর দোকান ফেরত পাননি। অন্য কেউ তা দখল করে নিয়েছেন।

ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, বঙ্গবাজারের উল্টোপাশে ফায়ার সার্ভিসের অফিস হলেও আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে শুরুতে গড়িমসি করে তারা। সঠিকভাবে কাজ শুরু করলে এতো ভয়াবহ অবস্থা হতো না। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব